বাস্তুতন্ত্র-ভিত্তিক-অভিযোজন এবং খাদ্য নিরাপত্তা (Ecosystem-based-Adaptation and Food Security)
বাস্তুতন্ত্র-ভিত্তিক-অভিযোজন এবং খাদ্য নিরাপত্তা (Ecosystem-based-Adaptation and Food Security)
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 23 Jan 2025
পূর্বের একটি ব্লগে আমি (বাস্তুতন্ত্রের সেবা প্রদান এবং খাদ্য) বাস্তুতন্ত্র কিরূপে আমাদের খাদ্য সংস্থান বিষয়ে পরিষেবা প্রদান করে সেই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। এই ব্লগটিতে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে খাদ্য সংকট উৎপন্ন হচ্ছে তার মোকাবিলা বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভর করে কিরূপে করা সম্ভব তার উপর আলোচনা করবো।
প্রথমেই উল্লেখ করেছি তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাব্য ফলগুলি হলো ফসলের ফলন কমে যাওয়া, গবাদিপশুর মধ্যে হিট স্ট্রেস, পরাগসংযোগকারী কীট পতঙ্গের ব্যাঘাত ঘটা, ক্ষতিকারক পেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, ফসল ও গবাদি পশুর রোগ বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কিন্তু আবার জলস্তরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, কাজেই পৃথিবীর অনেক অঞ্চল আজ জলের তলায় নিমজ্জিত হচ্ছে বা অদূরেই হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এবার বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তনের ফলে কি কি হচ্ছে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে অতিবৃষ্টির কথা শুনছি, কখনো অতিবৃষ্টি আর তার ফলে বন্যা তো আবার কখনো অনাবৃষ্টি তথা খরা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানের কৃষিব্যবস্থা কিন্তু বৃষ্টিনির্ভর (Rainfed agriculture), এখন এই বৃষ্টিপাত যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমানে না হয় তবে তা যে কৃষিকাজ এবং অবশ্যই ফলনে ঋণাত্মক প্রভাব ফেলবে তা বলাই বাহুল্য। পূর্বের তুলনায় চরম আবহাওয়া জনিত ঘটনাগুলির তীব্রতা এবং সংখ্যা বৃদ্ধি প্রতি বছরই চোখে পড়ছে। আর এর ফলে মানুষ ঘরবাড়ি, চাষজমি, গবাদিপশু সবই হারাচ্ছে। এখানে একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। এই যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপদ (Natural hazard) সেগুলি যে বর্তমানে প্রায়ই বিপর্যয়ে (Disaster) পরিণত হচ্ছে তার পিছনেও কিন্তু আমাদের অপরিকল্পিত এবংঅনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাগুলিই দায়ী, যেগুলির উল্লেখ আমি জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছি। এই পরিবর্তনগুলির ধরণ এতটাই অপ্রত্যাশিত হয়ে পড়ছে যে তা আগে থেকে অনুধাবন করা বা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি বোঝা গেলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের খাদ্যে তা কি মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করেছে বা ভবিষ্যতে আরও বেশি করতে চলেছে। কাজেই সচেতনতার প্রয়োজনই যে শুধু রয়েছে তাই নয়, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সময় এসে গেছে।
এই ব্যবস্থাগুলি কিরূপ বা প্রশ্ন করা ভালো, এই ব্যবস্থাগুলির ভিত্তি কি? এর ভিত্তি হলো প্রকৃতির ধারণক্ষমতার (Sustainability) উপর সর্বাগ্রে গুরুত্ব আরোপ করা। অর্থাৎ এমন ব্যবস্থা প্রয়োজন যা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রকৃতির ধারণক্ষমতাকেও বিপর্যস্ত করবে না। যেমন ধরো, বনভূমি ধ্বংস করে কৃষিজমি প্রস্তুত হবে না, এমন কৃষিব্যবস্থা যাকে আমরা নিবিড় কৃষি (Intensive agriculture) বলে অভিহিত করে থাকি যা ফলন বা ফসলের উৎপাদনশীলতাকে (Yield) সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় এরূপ ব্যবস্থার থেকে সাস্টেনেবল কৃষিব্যবস্থার (Sustainable agriculture) উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে, ফসলের স্থানীয় ভ্যারাইটিগুলিকে (Local variety) সংরক্ষণ করা ইত্যাদি। এই প্রকার ব্যবস্থাগুলিকে কিরূপে প্রয়োগ করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় বাস্তুতন্ত্র ভিত্তিক অভিযোজন (Ecosystem-based-adaptation/EbA) খুবই উপযোগী। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে মানুষকে সাহায্য করার জন্য একটি সামগ্রিক অভিযোজন কৌশলের অংশ হিসাবে জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্র পরিষেবার (পড়ুন বাস্তুতন্ত্রের সেবা প্রদান এবং খাদ্য) ব্যবহার হলো EbA-র মূল ভিত্তি।

এস্থানে EbA-র কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
উদাহরণ ১
যেমন ধরো, কোনো অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই হ্রাস পেয়েছে এর ফলে ওই অঞ্চলের যদি বা জলাশয়গুলিতে জলের পরিমাণ বৎসরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হচ্ছে, এবং এই পরিমাণের পার্থক্য খুবই বেশি হচ্ছে। আগে যেখানে সারা বৎসর মোটামুটি জল থাকতো এবং এর উপর ভিত্তি করে মানুষের জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছিল এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে আবার ওই অঞ্চলের জমি ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পাহাড়ের ঢালগুলি ধীরে ধীরে ভ্রান্ত জমি ব্যবহারের (Inappropriate land management practice) ফলে ধীরে ধীরে অবনমিত (Degradation) হয়ে গেছে, প্রচুর পরিমানে বনাঞ্চল ধ্বংস এবং তার ফলে ভূমিক্ষয় (Soil erosion) এর পিছনে দায়ী। এর মধ্যে আবার ওই অঞ্চলের জমি ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পাহাড়ের ঢালগুলি ধীরে ধীরে ভ্রান্ত জমি ব্যবহারের (Inappropriate land management practice) ফলে ধীরে ধীরে অবনমিত (Degradation) হয়ে গেছে, প্রচুর পরিমানে বনাঞ্চল ধ্বংস এবং তার ফলে ভূমিক্ষয় (Soil erosion) এর পিছনে দায়ী। আবার জনসংখ্যাও দিনকে দিন বৃদ্ধি পেয়েছে, তার একটা চাপ প্রকৃতির উপরে পড়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে বসতি অঞ্চল গড়ে উঠায় প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, যথেচ্ছ জলের ব্যবহার হচ্ছে, বন কেটে বসতি জমি গড়ে উঠছে ইত্যাদি। স্বাভাবিকভাবেই ওই অঞ্চল বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠছে। বর্ষাকালের সময় অতিবৃষ্টির কারণে প্রায়ই বন্যা হয়, আশপাশের সব ঘর বাড়ি, গবাদি পশু, চাষজমি সব ভাসিয়ে দেয়, তারপর কিছুদিন পর থেকে বৎসরের বাকি সময়ে আর বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় না, ধীরে ধীরে জলাশয়গুলো শুকোতে থাকে। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল পাওয়া যায় না, পাম্প লাগিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলে তা ব্যবহার করতে হয়, আগে ১০ মিনিট পাম্প চালিয়ে যতটা জল তোলা যেত এখন সেই পরিমান জল তুলতে প্রায় আধ ঘন্টা লাগে। আগে মাছ ধরে যে সকল মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করতো তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজেই জীবিকাতে একটা পরিবর্তন হয়েছে, কৃষিকাজ ছেড়ে অনেকেই বড়ো শহরে চলে যাচ্ছেন অন্য কর্মসন্ধানে। পূর্বে যারা মৎস্যজীবি ছিলেন তাঁরাও এখন এই পথই অনুসরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই ওই অঞ্চল বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠছে। এবার উপায় ?
উপায় একটা হলো, ওই অঞ্চলের যে সকল কৃষক ছিলেন, তাঁরা এগিয়ে এলেন। প্রথমেই পাহাড়ের ঢালগুলিতে বৃক্ষ রোপণ করা হলো। গাছগুলির মধ্যে স্থানীয় গাছের প্রজাতিগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হলো। ধীরে ধীরে এগ্রোফরেস্ট্রি সিস্টেম (Agroforestry system) গড়ে তুললেন, ফসলের সাথে সাথে বৃক্ষ রোপণের অনুশীলনের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেলো, জল ধারণ ক্ষমতা বাড়লো,এর প্রভাব ফলনের উপর পড়লো, ফলন বৃদ্ধি পেলো। আর ওই যে পাহাড়ের ঢাল গুলিতে পুনর্বনায়নের (Reforestation) মাধ্যমে ভূমিক্ষয় তো রোধ হয়েই ছিল, এখন অতিবৃষ্টিতে সহজেই ধ্বস নেমে প্রাকৃতিক বিপদ বিপর্যয়ে পরিণত হয় না। তারপর তাঁরা বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করলেন, ফলে ভূগর্ভস্থ জলের প্রয়োজনীয়তা কমল। এই যে স্থানীয় মানুষ নিজেদের সহায়তায় বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবা কে ব্যবহার করে আনসাস্টেনেবল অবস্থা থেকে একটা সাস্টেনেবল অবস্থায় ফিরিয়ে আনলেন, এবং ক্ষয়প্রাপ্ত একটি অঞ্চলকে পুনর্জীবন প্রদান করলেন, এই ব্যবস্থাটাই হলো বাস্তুতন্ত্র ভিত্তিক অভিযোজন।
উদাহরণ ২
আবার ধরো, একটি ম্যানগ্রোভ অঞ্চল। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যথেচ্ছ বন কেটে ফেলে বাসভূমি গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি বেশ কয়েক বৎসরে ধরে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে, পূর্বে পাঁচ দশ বৎসরে একটা প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝা হতো, আজকাল প্রতি বৎসরই কোনো না কোনো ঝঞ্ঝা হয়, স্থানীয় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, সব ঠিকঠাক হওয়ার আগেই আবার একটি ঝড় এসে উপস্থিত হয়। এ অঞ্চলে মানুষের জীবিকা বলতে প্রধানত কৃষিকাজ, মাছ ধরা এবং গৃহপালিত পশুপালন ছিল। কৃষিকাজ ছিল মূলত বৃষ্টি নির্ভর। জ্বালানির কাঠ-কুটো, ঘর ছাওয়ার পাতা, গাছের খুঁটি ইত্যাদি জঙ্গল থেকেই আসত, গবাদি পশুরাও চড়তো মাঠে ঘাটে। মৎস্যজীবিরাও স্থানীয় প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন খুব বৃষ্টি হওয়ার দরুন প্রচুর জমি জলের তলায় চলে গেছে, পশু চারণের স্থান প্রায় নেই বললেও হয়। তাদের রোগের প্রাদুর্ভাবও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় মানুষ এখন আর পশুপালন করতে পারছেন না, আগে গৃহপালিত গরু, বা ছাগল থেকে দুধ পাওয়া যেত সহজেই, এখন তা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অধিক বৃষ্টিপাত এবং ঝড় ঝঞ্ঝায় চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, বন্যা হয়ে মাটির চরিত্রে পরিবর্তন ঘটেছে, লবনাক্ত হয়ে পড়েছে, কৃষিকাজও খুব ভালো হচ্ছে না, ফলন কমেছে। এর প্রভাব জন জীবনে পড়েছে, বিশেষ করে তাঁদের খাদ্য ব্যবস্থায়। এখন কি উপায় ?
একটি সংস্থা এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে ৬০ জন স্থানীয় নারী পুরুষকে ম্যানগ্রোভ বনের উপযোগিতা সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ প্রদান করলো। তাঁরা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গুরুত্ব পরিষেবা সম্পর্কে বিশদে অবহিত হলেন, এর পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৃক্ষ প্রজাতিগুলির চারা গাছ তৈরী করলেন। সেই চারা গাছ রোপণ করা হলো, ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধার সম্ভব হলো। উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার (Mangrove restoration) ও সংরক্ষণ ঝড়ের জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করলো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে একটি বাফার প্রদান করলো, যেমন বন্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধ করলো, এখন আর এগুলির ফলে কৃষিজমি জলে নিমজ্জিত হয় না, ফসল নষ্ট হয়না ইত্যাদি। এটি মৎস্য চাষকেও সমর্থন করে। বাস্তুতন্ত্র নির্ভর মৎস চাষ এবং কাঁকড়া চাষ সম্পর্কে প্রচার এবং প্রশিক্ষণের ফলে সেগুলি প্রোটিনের উৎস হলো এবং এই চাষগুলি স্থানীয় মানুষদের জীবিকার সাথে যুক্ত হয়ে তাঁদের অর্থ উপার্জনের অন্যতম একটি পথ হয়ে উঠলো।
উদাহরণ ৩
একটি জলাভূমি অধ্যুষিত অঞ্চল। কিন্তু সম্প্রতি কিছু বৎসর যাবৎ বৃষ্টিপাতের ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে, বৃষ্টিপাত এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে খরা সৃষ্টি হচ্ছে, জলাশয়গুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি আবার প্রায় শুকিয়ে যাওয়া জলাগুলি বুজিয়ে বাসজমি তৈরী হচ্ছে। এইবার জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এখন বৃষ্টিপাত হলেই বন্যা হয়ে যায় কিন্তু সেই জল ধরে রাখা যায় না। কয়েক বৎসর পূর্ব পর্যন্ত এই অঞ্চলের মানুষ কৃষিকাজ ও পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন আর সেই ফলন নেই, কৃষিজমিতে প্রয়োজনও পরিমানে জলের জোগান নেই। আবার তাপপ্রবাহের ফলে ফসল নষ্ট হচ্ছে। পশুচারণের মাঠগুলিরও অবস্থা খারাপ, পশুখাদ্যের প্রয়োজনীয় ঘাস তেমন একটা উৎপন্ন হয়না। হিট স্ট্রেসের কারণে গবাদি পশুও মারা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় মানুষের খাদ্য সংস্থানের উপর প্রশ্নচিহ্ন দেখা যাচ্ছে। এরূপ চলতে থাকলে অচিরেই যে পুষ্টির নিরাপত্তা ব্যাহত হবে তা বলাই বাহুল্য। তবে এখন কি উপায়?
উপায় হলো জলাভূমি পুনরুদ্ধার (Wetland restoration) করা। জলাভূমি পুনর্বাসন জল প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে, জলের গুণমান উন্নত করতে এবং জলজ প্রজাতির জন্য বাসস্থান সরবরাহ করতে সহায়তা করতে পারে। জলাভূমি বন্যার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক বাফার হিসেবেও কাজ করে এবং কৃষি ও মৎস্য চাষে সহায়তা করতে পারে। জলাশয়গুলো পুনর্নির্মাণের দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন অবশ্যই তবে তা ধরে রাখতে কি করা যায়। স্থানীয় মানুষজন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করলেন এই অঞ্চলে স্থানীয় গাছ লাগাতে হবে, এই গাছগুলিই একদিকে যেমন কার্বন সিকোয়েস্ট্রেট (Carbon sequestrate) করে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকে ব্যালান্স করবে, আবার মাটিতে জল ধরে রাখার কাজও করবে। এর ফলে জলাভূমিগুলি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে, জীব বৈচিত্র আবার ফিরে আসবে আশা করা যায়। খাদ্য সংস্থান সম্ভব হবে।
আশা করি বাস্তুতন্ত্র-ভিত্তিক-অভিযোজন কিরূপে জলবায়ু পরিবর্তনকে সামলে খাদ্য সংস্থান কে নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে তা কিছুটা বোঝা গেলো।
বি.দ্র. প্রবন্ধটি ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে আমার ব্লগে প্রথম প্রকাশিত হয়, পুনরায় প্রবন্ধটি এই সাইটে প্রকাশিত হলো।
Blogs
Our Latest Blogs
পূর্ববর্তী ব্লগটিতে আমি সুস্থায়ী খাদ্য ও পুষ্টি সুরক্ষায় ঐতিহ্যগত জ্ঞান কেন আবশ্যিক সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি। সেখানে প্রধানত আমি কারণগুলিকে উল্লেখ করেছি, তবে বিশদে উদাহরণ সহযোগে সেগুলি বর্ণনার অবকাশ এখনও রয়েছে, সে বিষয়ে আমি পরে অবশ্যই লিখবো। বর্তমান ব্লগটিতে আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কি কি উপায়ে সুস্থায়ী খাদ্য এবং পুষ্টি সুরক্ষায় এই ঐতিহ্যবাহী খাদ্যগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করবো।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 27 Jan 2025
বর্তমান আলোচনায় প্রথম প্রয়োজন ঐতিহ্যগত জ্ঞান (বা Traditional Knowledge) কি সেটা বোঝা। ঐতিহ্যগত জ্ঞান বলতে বোঝায় সঞ্চিত জ্ঞান, অনুশীলন, দক্ষতা, উদ্ভাবন এবং প্রজ্ঞাকে যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কোনো সম্প্রদায় বা সমাজের মধ্যে সময়ের সাথে সাথে প্রবাহিত হয়।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 27 Jan 2025
মাছে -ভাতে বাঙালী। খাদ্য নির্বাচনের সূত্র মেনেই জলবহুল বাংলায় অনাদিকাল থেকেই মাছ বাঙালীর খাদ্য হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। মাছ চিরকালই বাঙালির রসনাকে তৃপ্ত করার পাশাপাশি পুষ্টি প্রদান করে এসেছে।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 27 Jan 2025
পূর্ববর্তী ব্লগে পরাগসংযোগকারী কীট-পতঙ্গ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছিলাম (অনুগ্রহ করে পড়ুন খাদ্য এবং পুষ্টি নিশ্চয়তায় পরাগ-সংযোগকারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা)। বর্তমান ব্লগটিতে কীট-পতঙ্গ ছাড়া অন্য কয়েকটি প্রাণী নিয়ে আলোচনা করবো যারাও পরাগায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 27 Jan 2025
কীট-পতঙ্গ, বিশেষত পরাগ বহনকারী বা পরাগ-সংযোগকারী কীট-পতঙ্গ (Pollinator), আমাদের খাদ্য উৎপাদনের জন্যে অপরিহার্য। যে সকল খাদ্যশস্য আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি তার প্রায় ৭৫% পরাগ-সংযোগকারী প্রাণীদের উপর নির্ভর করে, এই সকল পরাগ-সংযোগকারী প্রাণীদের মধ্যে কীট-পতঙ্গ উল্লেখযোগ্য।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 26 Jan 2025
ইতিপূর্বে খাদ্যের রূপান্তরের সম্বন্ধে একটি ব্লগে আমি সবিস্তারে আলোচনা করেছি। বর্তমানেও এর ধারা অব্যাহত। এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যেমন অর্থনৈতিক উন্নতি বা আয় বৃদ্ধি, নগরায়ন, এবং অবশ্যই বিশ্বায়ন। বর্তমান আলোচনাটি আমি সীমাবদ্ধ রাখবো খাদ্য ব্যবস্থার উপরে বিশ্বায়নের প্রভাবের বিষয়ে।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 26 Jan 2025
আমরা আমাদের খাদ্যের দিকে একটু তাকাই, দেখবো খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে, তা ব্যবহার হচ্ছে এবং অব্যবহৃত অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা একটা সরলরেখার ন্যায় (Linear economy)। উৎপাদন-ব্যবহার-নষ্ট (Make-Take-Waste)। কিন্তু এই যে অংশটি ব্যবহার হচ্ছে না, তা উৎপাদন করতেও তো পয়সা লেগেছে। শুধু যে পয়সা লেগেছে, এমনটা নয়, জমি লেগেছে, জল লেগেছে, সার লেগেছে, আবার সেই অতিরিক্ত সার পরিবেশের উপর ঋণাত্মক প্রভাবও ফেলেছে - এ সকলই তো বৃথা গেলো, কোনো উপকার তো হলোই না, বরং অপকার হলো। কাজেই, এই উৎপাদন-ব্যবহার-নষ্ট (Make-Take-Waste) মডেলটি কার্যকরী হচ্ছে না। তবে কি করতে হবে? এই সরলরৈখিক সম্পর্কটিকে বৃত্তাকার সম্পর্কে (Circular economy) পরিণত করতে হবে।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 26 Jan 2025
আনদং থেকে সাড়ে ন'টার বাসে রওনা হয়ে পূর্ব সোলে (Dong Seoul) এসে পৌঁছলাম প্রায় দুপুর সোয়া এক'টায়। সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা রেস্তোরাঁ।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 26 Jan 2022
পূর্বের একটি ব্লগে আমি (বাস্তুতন্ত্রের সেবা প্রদান এবং খাদ্য) বাস্তুতন্ত্র কিরূপে আমাদের খাদ্য সংস্থান বিষয়ে পরিষেবা প্রদান করে সেই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। এই ব্লগটিতে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে খাদ্য সংকট উৎপন্ন হচ্ছে তার মোকাবিলা বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভর করে কিরূপে করা সম্ভব তার উপর আলোচনা করবো।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 23 Jan 2025
'আঃ বড্ড দাম নিচ্ছ, তরকারীতে তো হাত দেওয়ার উপায় নেই গো'। খদ্দেরের অভিযোগ শুনে বিক্রেতা একগাল হেসে, 'আমরাও তো দাম দিয়ে কিনে আনি বাবু, কতটুকু আর লাভ থাকে! তবে মাল আমার এখানে এক্কেবারে টাটকা' এই বলে প্রয়োজনীয় সব্জিগুলি খদ্দেরকে গুছিয়ে দিয়ে দেয়।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 22 Jan 2025
পূর্বে একটি ব্লগে আমি বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের সংরক্ষিত স্থান, বিভিন্ন প্রকারের জঙ্গলের বিষয়ে একটা প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজ আলোচনা করবো এই জঙ্গলের বন্য প্রাণ নিয়ে।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 22 Jan 2025
পূর্বের ব্লগটিতে আমি বিভিন্ন প্রকার ফরেস্ট বা জঙ্গলের বর্ণনা করেছি। এই ব্লগটিতে আমি দক্ষিণ কোরিয়ার ফরেস্টের কয়েকটি ছবি দিলাম, বছরের বিভিন্ন সময় টেম্পারেট ফরেস্টের বিভিন্ন রূপ।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 22 Jan 2025
আমাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা জঙ্গলকে (ফরেস্ট/Forest) খুব ভালোবাসেন, প্রকৃতির হাতছানিতে, জীবজন্তু কিংবা উদ্ভিদের আকর্ষণে প্রায়ই, বা সপ্তাহান্তে, বেরিয়ে পড়েন জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। আমার এই ব্লগের উদ্দেশ্য জঙ্গল সম্বন্ধে প্রাথমিক আলোচনা করা, বিভিন্ন প্রকার সংরক্ষিত স্থান (মূল উদ্দেশ্য- সংরক্ষণ), বিভিন্ন প্রকার জঙ্গলের (পরিবেশগত ভাবে) আলাদা আলাদা চরিত্র ইত্যাদি নিয়ে একটু চর্চা করা।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 22 Jan 2025
এবার একটু সরীসৃপ (Reptiles; class: Reptilia) প্রাণীদের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। আনদং-র চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের সংগ্রহে অনেক সরীসৃপ প্রাণী এখানে প্রদর্শনের জন্যে রেখেছেন।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 22 Jan 2025
আনদং-এ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে, ১০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই একটি ছোট চিড়িয়াখানা রয়েছে। আমরা সপ্তাহান্তে প্রায়ই সেখানে যাই।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 22 Jan 2025
ইতিপূর্বে পুষ্টি সুরক্ষা ও খাদ্য সংস্থান সম্পর্কিত ৪ টি পর্ব লিখেছি, সেখানে মিলেট, শাক, ডাল ইত্যাদির বিষয়ে উল্লেখ করেছি। আজ এই পর্বে একটু অন্য প্রকারের খাদ্যের কথা উল্লেখ করবো, যা বহুলভাবে ব্যবহৃত হলেও অতটা পরিলক্ষিত হয় না। ফার্মেন্টেড ফুড (Fermented foods) বা সন্ধানীকৃত খাদ্য এবং পানীয়ের কথা বলছি।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 20 Jan 2025
ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় তাঁর 'বাঙালীর ইতিহাস' গ্রন্থে প্রাচীন বাংলায় বাঙালির খাদ্যতালিকায় ডালের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 20 Jan 2025
বর্তমান পৃথিবীতে অন্যতম একটি সমস্যা হল 'মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ডেফিসিয়েন্সি' (Micro-nutrient deficiency), যা অনেক সময় 'হিডেন হাঙ্গার' (Hidden hunger) বলেও পরিচিত।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 20 Jan 2025
ভারতবর্ষ ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক মিলেট বৎসর হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছিল, যা ফুড এবং এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (Food and Agriculture Organisation of United Nations) ও জাতিসংঘের (United Nations) সাধারণ পরিষদ অনুমোদন করেছে (FAO events)। আমরা এই পর্বে আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মিলেট নিয়ে আলোচনা করবো।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 17 Jan 2025
পুষ্টি সুরক্ষা এবং খাদ্য সংস্থান- পর্ব-১: সূচনা (Nutrition Security and Food – Part-1: Introduction)
বর্তমান ভারতবর্ষের তথা পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো অপুষ্টি। ভারতবর্ষের দিকে দৃকপাত করলে, ক্ষুধা এবং পুষ্টি সংক্রান্ত সমসাময়িক কালে যে সকল প্রতিবেদন উঠে আসছে তার কোনোটিই যে অতি আশাপ্রদ নয় এ কথা বলাই বাহুল্য। স্বাধীন ভারতবর্ষে দেশবাসীর খাদ্য সুরক্ষা হেতু একাধিক প্রকল্পের প্রবর্তন হয়েছে।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 17 Jan 2025
খাদ্য থেকে পুষ্টি সংগৃহীত হয়, যার মাধ্যমে জীব প্রাণ ধারন করে। অতএব সকল জীবের ন্যায় মানুষের খাদ্য এবং পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। খাদ্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি এবং খাদ্যগ্রহনের পর শারীরিক উপযুক্ততা জীবকে খাদ্য নির্ধারণে সহায়তা করে। আবার, আহার তালিকায় খাদ্যবস্তুর সংযোজন বা বিয়োজন হলো খাদ্যতালিকা বা আহারের রূপান্তর।
- সম্পত ঘোষ (Sampat Ghosh)
- 17 Jan 2025